এই ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশি মানুষদের যৌনশিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।   এতে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতন সম্পর্কিত তথ্য সহ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যৌন হয়রানি যেমন সামনাসামনি ঘটতে পারে তেমন অনলাইনেও ঘটতে পারে। কোন ঘটনাগুলো ইন্টারনেটে যৌন হয়রানি হিসাবে বিবেচনা করা যায়  এবং কীভাবে সেসব এড়ানো যায় সে সম্পর্কে আমরা আপনাদের কে জানাতে চাই।

যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা নেই বা নিজস্ব কম্পিউটার নেই, তাদের অনেকেই যখন দেখেন যে তারা সরাসরি অন্যদের মেসেজ দিতে পারবেন তখন তারা খুবই উত্তেজিত হয়ে যান। অন্যদের মেসেজ  করার সময় এবং পোস্ট করার সময় কী কী লিখছেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে মেসেজ পাঠাবেন এবং পোস্ট করবেন সে সম্পর্কে নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হল:

১. অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। আপনি যা খুশি তা মন্তব্য করতে পারেন, তবে আপনার মন্তব্য মার্জিত হওয়া উচিত। এমন কিছু আপনি কাউকে লিখবেন  না, যা কেউ আপনাকে বললে আপনার নিজের খারাপ লাগবে।

২. কেউ দেখতে কেমন তা নিয়ে মন্তব্য না করার চেষ্টা করুন। "আপনার ওজন বেড়েছে", "আপনাকে খুব রোগা দেখাচ্ছে", বা "আপনাকে খুব কালো দেখাচ্ছে" এইরকম কোন মন্তব্য লিখা উচিৎ নয়। সবাই জানে তারা নিজেরা দেখতে কেমন, তাই অন্যদের প্রতি উদার মানসিকতা দেখানো উচিত।

৩. যৌনতা সম্পর্কিত কোন মন্তব্য বা মেসেজ করবেন না। আপনি চেনেন  না, এমন কাউকে মেসেজ করবেন না এবং অবাঞ্চছিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন না। “আপনার কি প্রেমিক আছে?” “আপনার কি স্বামী আছে?” ’আপনি কোথায় থাকেন?” এ ধরনের প্রশ্ন করা বিব্রতকর এবং কান্ডজ্ঞানহীন কাজ। এবং কাউকে কুরুচিপূর্ণ মেসেজ দেওয়াও উচিৎ না।

৪. বাংলাদেশি মানুষদের ভেতর একটি জিনিস প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, যে তারা অপরিচিত মানুষদের কেও ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিষ্টে এড করে বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। আপনার মনে রাখা উচিত যে আপনি শুধুমাত্র আপনার পরিচিত এবং বিশ্বাসী ব্যক্তিদের সাথেই ফেসবুকে ফ্রেন্ড হবেন। যদি আপনি অপরিচিত লোকদের ফেসবুকে এড করতে থাকেন, তাহলে এমনও হতে পারে আপনি বিপদজনক কাউকে এড করে নিচ্ছেন এবং নিজের সব স্পর্শকাতর তথ্য তাকে দিয়ে দিচ্ছেন।

৫. নিজের বা অন্য যেকোন তথ্য সোশ্যাল মিডিয়া, বা ফেসবুকে পোস্ট করার সময় সতর্ক থাকুন। আপনার ঠিকানা বা আপনি কোথায় থাকেন তা কখনই শেয়ার করবেন না। আপনার সন্তানরাও যেন এই জিনিসগুলো না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

৬. অন্য কোন মানুষের ছবি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে নিজের প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করবেন না। অনেক মানুষ আছেন যারা অপরিচিত মানুষ অথবা বিদেশিদের ছবি এলোপাথাড়ি ব্যবহার করে ফেইক প্রোফাইল তৈরি করে। এটি খুবই অদ্ভুদ একটি কাজ।

মাঝে মাঝে আমরা নিজেদের বর্তমান পরস্থিতির খবর জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করি, যা অনেক সময় বিপদের কারণ হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যখন ছুটিতে যাচ্ছেন তখন যদি আপনি পোস্ট করেন যে আপনার পুরো পরিবার বেড়াতে যাচ্ছে এবং বাড়ি সম্পূর্ণ খালি, সেসময় যে কেউ আপনার বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করতে পারে কারণ তারা জানে যে বাড়িতে কেউ নেই।

৭.পুরুষ বা নারী যেই হোক কখনই তার কাছে তার গোপনাঙ্গের ছবি চাইবেন না। এটি খুবই খারাপ একটি অভ্যাস। কারো ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করবেন না।

৮. নিজের ব্যক্তিগত/যৌনাঙ্গের ছবি কখনো কোন অপরিচিত মানুষকে পাঠাবেন না। এটি খুবই জঘন্য একটি কাজ এবং এটি যৌন হয়রানির শামিল ।


৯. আপনি যদি কাউকে কয়েকবার মেসেজ দেন, এবং তিনি যদি আপনাকে উত্তর না দেয়, তাহলে আপনার উচিৎ তাকে মেসেজ দেয়া বন্ধ করা। এটি যে কাউকে অস্বস্তি বোধ করাতে পারে এবং এমনও হতে পারে তিনি/তারা আপনার সাথে কথা বলতে চাইছেন না।

অনেক মেয়েই তাদের বয়ফ্রেন্ডকে ছবি পাঠাতে একধরনের চাপে থাকে। ছেলেরা বলতে পারে, "আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তো তোমাকেই বিয়ে করব। আমাকে তোমার শরীরের একটি ছবি পাঠাও!!! তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?" কিন্তু কোন ভাবেই এইরকম কোনো কিছু পাঠানোর চেষ্টা করবেন না কারণ আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করে সে সেগুলো অনলাইনে পোস্ট করতে পারে বা তার বন্ধুদের দেখাতে পারে।

ফেসবুকে আপনার নিজের ছবিই পোস্ট করা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাচ্চাদের ছবি পোষ্ট করা অনুচিত এবং বেমানান একটি কাজ, বিশেষ করে অচেনা বা অপরিচিত বাচ্চাদের ছবি পোষ্ট করা।


ইন্টারনেটে অনেক ভাল জিনিস আছে, কিন্তু অনেক খারাপ জিনিস এবং খারাপ মানুষও আছে। আপনি ইন্টারনেটে যা পোস্ট করবেন তা চিরকাল থাকবে, তাই দয়া করে সতর্ক থাকুন। দয়া করে দয়ালু এবং বিবেকবান হন এবং কাউকে হয়রানি করবেন না।

অনেক পুরুষরা নারীদের নামে ভুয়া প্রোফাইল চালায়। এটাও খুবই বাজে। আপনার নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য কোনো জাল প্রোফাইল তৈরি করা উচিত নয়। কোন ফেসবুক প্রোফাইল ফেক কিনা তা বলার অনেক উপায় আছে। প্রোফাইলে তাদের অবস্থানের শহর এবং কর্মস্থান পোস্ট করা আছে কিনা দেখুন। খেয়াল করে দেখুন তারা কি শুধুমাত্র একই ছবি বারবার পোস্ট করে? অথবা পোস্টের ফটোগুলো কি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পোস্ট করে? তারা যদি এই কাজগুলো করে তাহলে প্রোফাইলটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। এরূপ কোনো প্রোফাইল নিজের ফ্রেন্ডলিষ্টে এড করবেন না।

ডেটিং

অনেকেরই ইন্টারনেটে একজন ছেলে বা মেয়ের সাথে পরিচয়  হতে পারে এবং এই পরিচয়কে তারা একটি সম্পর্কে রূপান্তরিত করতে চাইতে পারে। এই ব্যাপারটি বিপদজনক হতে পারে, কারণ আমরা আসলে জানি না তারা যাকে মেসেজ করছে সেই ব্যাক্তিটি মানুষ হিসেবে কেমন। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি  একজন ভুয়া লোকের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন, তাহলে সম্ভাব্য পদক্ষেপ গুলো হলোঃ

১. অপর প্রান্তের ব্যক্তির সাথে ভিডিও চ্যাট করার চেষ্টা করুন। ভিডিওতে আপনি দেখতে পাবেন অপর প্রান্তে আসলে কে আছেন। যদি সেই ব্যক্তিটি কখনই তার ক্যামেরা চালু করতে না চায় বা এমন বলে যে তার ডিভাইসের ক্যামেরা নষ্ট তাই সে কখনোই ক্যামেরা চালু করতে পারবে না, তবে প্রোফাইলটি একটি নকল প্রোফাইল হতে পারে।

২. যদি ব্যক্তিটি সত্যিকারের মানুষ হয়, এবং আপনার সাথে ভিডিও চ্যাট করে, এবং আপনি সরাসরি তার সাথে দেখা করতে চান তাহলে তার সাথে এমন একটি পাবলিক প্লেসে দেখা করুন যেখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়, যেমন কোন ক্যাফেতে চা বা কফির জন্য তাদের সাথে দেখা করুন বা শপিংমলে দেখা করতে যেতে পারেন। কখনই কোন অপরিচিত মানুষের সাথে প্রাইভেট প্লেসে দেখা করবেন না।

আপনি যাই করুন না কেন, দয়া করে সবসময় সতর্ক থাকুন। আপনি যদি একজন অভিভাবক হন এবং আপনার সন্তান থাকে, তাহলে তাদের সাথে ইন্টারনেটে নিরাপত্তা সম্পর্কে কথা বলতে ভুলবেন না। বিশেষ করে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের অনলাইন অপরাধের ভুক্তভোগী হতে পারে। বাচ্চাদের ফোনে সব ধরনের পর্ন সাইট ব্লক করে দিন এবং অনলাইনে তাদের সতর্ক থাকার শিক্ষা দিন।  মনে রাখবেন, আপনি ইন্টারনেটে যা দেখেন তা সবসময় সত্য নয়, তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।