এই ওয়েবপেজটি পুরুষদের প্রজনন বিষয়ক স্বাস্থ্য এবং যেসব কারণে তাঁদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পরতে পারে সেই সব বিষয়ে, বিশেষভাবে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। একজন ব্যাক্তির যৌন স্বাস্থ্য, তার শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে, আপনার শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একসঙ্গে কাজ করে।
পুরুষদের প্রজনন তন্ত্র কি নিয়ে তৈরি?
পুরুষ প্রজনন তন্ত্রের অঙ্গগুলো মূলত, শুক্রাণু এবং বীর্য তৈরির ও সরবরাহের কাজ করে থাকে। শুক্রাণু হচ্ছে পুরুষদের জননকোষ এবং বীর্য হচ্ছে শুক্রাণুর চারপাশে থাকা তরল পদার্থ। প্রজনন তন্ত্রের সাহায্যে পুরুষদের যৌন হরমোন তৈরি এবং নিঃসরণ হয়ে থাকে।
পুরুষদের সেক্স হরমোন গুলো কি?
হরমোন হচ্ছে শরীরের গ্রন্থি দ্বারা তৈরি এক ধরনের রাসায়নিক বার্তা সরবরাহকারী, যা আপনার রক্তের মাধ্যমে শরীরের একস্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে নিয়ন্ত্রন করে। শরীরের বৃদ্ধিতে, প্রজননের ক্ষেত্রে এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য হরমোন এর প্রয়োজন হয়।
পুরুষদের প্রধান সেক্স হরমোন হচ্ছে টেস্টোস্টেরন। অধিকাংশ টেস্টোস্টেরন পুরুষদের শুক্রাশয়ে (অন্ডকোষে) উৎপন্ন হয়ে থাকে। অল্প সংখ্যক টেস্টোস্টেরন অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতেও (কিডনির সাথে অবস্থিত) উৎপন্ন হয়।
পুরুষদের যৌন আকাঙ্ক্ষা, শুক্রাণু উৎপাদন, পেশীর গঠন ও শক্তি, এবং হাড়ের পুরুত্ব নির্ধারণে টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা রয়েছে।
পুরুষ প্রজনন তন্ত্রের অঙ্গগুলো কি কি?
নিম্নের প্রদত্ত অঙ্গগুলো নিয়ে পুরুষ প্রজনন তন্ত্র গঠিতঃ
পেনিস (শিশ্ন বা পুরুষাঙ্গ):
যৌন মিলনের উদ্দেশ্যে পুরুষদের ব্যবহৃত অঙ্গ হচ্ছে শিশ্ন বা পুরুষাঙ্গ। এটি অনেকগুলো সংবেদনশীল স্নায়ুপ্রান্ত ধারণ করে থাকে। পুরুষাঙ্গের মাথার দিকে মূত্রনালির প্রারম্ভভাগ অবস্থিত। এই মূত্রনালীর মাধ্যমে মূত্র এবং বীর্য ব্যাক্তির দেহ থেকে নির্গত হয় এবং এই বীর্যের ভেতর শুক্রাণু থাকে। যৌন মিলনের চরম উত্তেজনার (রাগমোচনঃ যৌন উত্তেজনার সর্বোচ্চ পর্যায়) সময় পুরুষাঙ্গের শীর্ষভাগ থেকে বীর্য বেরিয়ে আসে।
যখন পুরুষাঙ্গ দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে, তখন কর্পোরা ক্যাভারনোসা (পুরুষাঙ্গের অভ্যন্তরে অবস্থিত এক ধরণের টিস্যু) মূত্রনালীকে চেপে ধরে, যার ফলে সাময়িক সময়ের জন্য প্রস্রাব বের হওয়া বন্ধ থাকে এবং রাগমোচনের সময় কেবল বীর্য বেরিয়ে আসে।
বাংলাদেশি পুরুষদের উত্থিত অবস্থার পুরুষাঙ্গের গড় দৈর্ঘ্য হচ্ছে চার ইঞ্চি। পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ হওয়ার ক্ষেত্রে জিনতত্ত্ব (জেনেটিক্স বা বংশগতি) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও অন্যান্য উপাদান যেমন হরমোন, পরিবেশ এবং পুষ্টিগুণ পুরুষাঙ্গের দৈর্ঘ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
স্ক্রোটাম (অন্ডথলি): স্ক্রোটাম হচ্ছে চামড়ার তৈরি এক ধরণের আলগা থলি যা সাধারণত পুরুষাঙ্গের পিছনে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এটি অন্ডকোষ (শুক্রাশয়), স্নায়ু এবং রক্তনালী ধারণ করে। অন্ডথলি, অন্ডকোষগুলো কে প্রতিরক্ষা করে এবং ঠান্ডার সময় এগুলোকে শরীরে কাছে টেনে নেয় এবং গরমের সময় আরও নিচের দিকে ঝুলিয়ে রাখে। স্বাভাবিক পরিমাণের শুক্রাণু উৎপাদনে, শুক্রাশয় কে অবশ্যই শরীরের তাপমাত্রার থেকে কিছুটা শীতল থাকতে হয়।
টেস্টিক্যাল্স (অণ্ডকোষ): অন্ডকোষ হচ্ছে অন্ডথলির ভেতর অবস্থিত ডিম্বাকৃতির ন্যায় অঙ্গ। স্পার্মাটিক কর্ড (শুক্রাণু নালিকা) অণ্ডকোষগুলোকে তাদের যথাস্থানে ধরে রাখে এবং সেগুলোকে রক্ত সরবরাহ করে। প্রায় সব পুরুষদের দুটি অণ্ডকোষ থাকে, একটি অণ্ডথলির বাম পাশে এবং আরেকটি অণ্ডথলির ডান পাশে। অণ্ডকোষ মূলত টেস্টোস্টেরন তৈরি এবং শুক্রাণু উৎপাদন করে থাকে। অণ্ডকোষের ভিতরে অনেক গুলো কুন্ডলীকৃত নালিকা থাকে এগুলোকে সেমিনিফেরাস নালিকা বলে। এই সেমিনিফেরাস নালিকাগুলোতেই শুক্রাণু উৎপাদিত হয়।
এপিডিডাইমিসঃ এপিডিডাইমিস হচ্ছে একটি লম্বা, প্যাঁচানো নালিকা, যা প্রতিটি অণ্ডকোষের পিছনে অবস্থিত। এগুলো অণ্ডকোষে উৎপাদিত শুক্রাণুগুলোকে সংরক্ষণ এবং বহন করে।
ভাস ডিফারেন্স (শুক্রনালি): ভাস ডিফারেন্স হচ্ছে এক ধরনের নালিকা যা এপিডিডাইমিস থেকে শুরু হয়ে শ্রোণীগহ্বর (পেলভিক ক্যাভিটি) এর মধ্যে দিয়ে মূত্রথলির পিছনে গিয়ে পৌছায়। এটি পরিপক্ব শুক্রাণুগুলোকে বীর্যপাতের উদ্দেশ্যে মূত্রনালিতে সরবরাহ করে থাকে।
ইজাকুলেটরি ডাক্টস (ক্ষেপন নালি): প্রতিটি অণ্ডকোষ এর সাথে একটি করে ভাস ডিফারেন্স (শুক্র নালিকা) থাকে যা সেমিনাল ভেসিকলের সাথে মিলে ক্ষেপন নালি গঠন করে। এই ক্ষেপন নালি পরবর্তীতে প্রোস্টেট গ্রন্থিতে গিয়ে প্রবেশ করে, যেখান থেকে বীর্যের জন্য প্রয়োজনীয় তরল (ফ্লুইড) সংগৃহীত হয় এবং পরে তা মূত্রনালির ভেতর নির্গত করা হয়।
ইউরেথ্রা (মূত্রনালি): মূত্রথলি থেকে মূত্র, শরীরের বাইরে বের হয়ে আসার রাস্তা হচ্ছে মূত্রনালি। এবং বীর্যপাতের সময় এর মাধ্যমেই বীর্যের স্খলন হয়।
সেমিনাল ভেসিকলঃ সেমিনাল ভেসিকল হচ্ছে থলির মতো দেখতে গ্রন্থি, যা মূত্রথলির নিম্নভাগের দিকে থেকে, শুক্রনালির সাথে যুক্ত হয়। সেমিনাল ভেসিকল, বীর্যে বিদ্যমান ৮০ শতাংশ পিচ্ছিলকারক তরল পদার্থ উৎপাদন করে, যার ভিতর ফ্রুক্টোজ অন্যতম। ফ্রুক্টোজ শুক্রাণুদের শক্তির যোগান দেয় এবং তাদের নড়াচড়া করতে সাহায্য করে।
প্রোস্টেট গ্রন্থিঃ প্রোস্টেট হচ্ছে মূত্রথলির নিম্নে এবং মলদ্বারের সম্মুখে অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রন্থি। বীর্যপাতের সময়, প্রোস্টেট বীর্যে বাড়তি কিছু তরল(ফ্লুইড) সংযুক্ত করে, যা শুক্রাণুদের পুষ্টি পেতে সাহায্য করে। এবং মূত্রনালির রাস্তা প্রোস্টেট গ্রন্থির ভিতর দিয়ে অতিক্রম করে।
বাল্বোইউরেথ্রাল গ্রন্থি বা কাওপার এর গ্রন্থিঃ প্রোস্টেট গ্রন্থির একদম নিচেই মূত্রনালির দুপাশে দুটি বাল্বোইউরেথ্রাল গ্রন্থি অবস্থিত। তারা এক ধরনের স্বচ্ছ, পিচ্ছিলকারক ফ্লুইড উৎপাদন করে, যা সরাসরি মূত্রনালিতে প্রবেশ করে। এই ফ্লুইড মূত্রনালিকে পিচ্ছিল করে এবং পেশাবের পর অবশিষ্ট অম্ল বা এসিডকে প্রশমন করে।
পুরুষরা প্রজনন তন্ত্রের কোন কোন সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে পারেন?
সাধারণত বিভিন্ন লক্ষণের মাধ্যমে প্রজনন তন্ত্রের সমস্যা গুলোর সংকেত পাওয়া যায়। নিম্নে বর্ণিত লক্ষণগুলোর দেখা পেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোনঃ
পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ, বা পায়ুতে পিণ্ড অথবা কালশিটে ভাব
ব্যাথার অনুভব বা ফোলা ভাব
কুঁচকি অথবা তলপেটের দিকে ব্যাথা বা অস্বস্তি অনুভব করা
রক্ত মিশ্রিত বীর্য
রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব
প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করা
প্রস্রাবের চাপ ধরে রাখতে সমস্যার অনুভব করা এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে প্রস্রাব বের হয়ে যাওয়া
সহবাসের উদ্দেশ্যে পুরুষাঙ্গে প্রয়োজনীয় মজবুত উত্থান পেতে এবং তা বজায় রাখতে সমস্যার সম্মখীন হওয়া
লিঙ্গোত্থান শক্তি এবং লিঙ্গ শৈথিল্য
যৌন উত্তেজনার সময় পুরুষাঙ্গে রক্ত প্রবাহের ফলে লিঙ্গোত্থান হয়। লিঙ্গোত্থানের সময়,পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে যায়। অনেক পুরুষদের পুরুষাঙ্গ ডানে বা বামে সামান্য বাঁকা হয়ে থাকে। এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয় এবং এটি নিয়ে দুঃচিন্তা করার কিছু নেই।
বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন হৃদযন্ত্রের রোগ, রক্তে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি (স্থূলতা) এবং ধূমপান করা, লিঙ্গ শৈথিল্যের (পুরুষত্বহীনতা) কারণ হতে পারে এবং লিঙ্গোত্থানের শক্তি ও যৌন প্রবৃত্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। ডিপ্রেশন (বিষাদগ্রস্ততা), উদ্বেগ, মানসিক চাপ, দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যগত উদ্বেগের বিষয়গুলোও যৌন প্রবৃত্তিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
সহবাসের জন্য প্রয়োজনীয়, পুরুষাঙ্গের দৃঢ় উত্থান এবং তা বজায় রাখার অক্ষমতাই হচ্ছে ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ শৈথিল্যতা। লিঙ্গোত্থানের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া, চিকিৎসার প্রয়োজন, এমন স্বাস্থ্যগত অবস্থার এবং হৃদপিণ্ডের রোগের ঝুঁকির অন্তর্নিহিত পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।
যদি ইরেকটাইল ডিসফাংশন নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা হয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। অনেক সময় শরীরের অন্যান্য অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলোর চিকিৎসা করালে ইরেকটাইল ডিসফাংশন আপনাআপনি ঠিক হয়ে যেতে পারে। প্রায়শই অবিরত ইরেকটাইল ডিসফাংশন এর সমস্যা চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে।
অণ্ডকোষের ক্যান্সার
১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের পুরুষদের মাঝে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকা ক্যান্সার হচ্ছে অন্ডকোষের ক্যান্সার। এর সর্বোচ্চ লক্ষনীয় উপসর্গটি হচ্ছে অন্ডকোষে ব্যাথাহীন পিন্ডের উপস্থিতি। এবং অন্যান্য লক্ষণগুলো হচ্ছেঃ
ফোলা ভাব অথবা অণ্ডথলি হঠাৎ তরল দিয়ে পূর্ণ হতে থাকা
অণ্ডকোষে পিণ্ড অথবা ফোলা ভাব
অণ্ডথলি স্বাভাবিক এর থেকে ভারী অনুভব হওয়া
কুঁচকি অথবা তলপেটের দিকে নিস্তেজ ভাব
অন্ডথলি অথবা অণ্ডকোষে ব্যাথা বা অস্বস্তি অনুভব করা
অন্ডকোষ ছোট হয়ে যাওয়া (টেস্টিকুলার এট্রোফি)
উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখতে পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার
পুরুষাঙ্গের ম্যালিগন্যান্ট কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির কারণে পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার হয়ে থাকে। পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার পুরুষাঙ্গের যেকোন জায়গায় হতে পারে, তবে সবথেকে বেশি, পুরুষাঙ্গের মাথায় বা মাথার চামড়ায় (খৎনাবিহীন অবস্থায়) দেখতে পাওয়া যায়।
ক্যান্সার ঘটিত সকল পরিবর্তন খালি চোখে বোঝা না গেলেও, সাধারণত পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের কারণে পুরুষাঙ্গ স্বাভাবিকের থেকে ভিন্ন দেখায়। পুরুষাঙ্গের ত্বকের রং বিবর্ণ হয়ে যাতে পারে এবং পুরুষাঙ্গে পিন্ডের মতো অনুভব হতে পারে।
পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের লক্ষণসমূহঃ
ব্যাথাহীন পিণ্ড অথবা ঘা (ঘা এর ক্ষত থেকে রক্তপাত হওয়া)
ফোলা ভাব বা জ্বালাপোড়া করা, বিশেষ করে পুরুষাঙ্গের মাথায় (ব্যালানাইটিস)
চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া অথবা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া
নীলচে বাদামী বর্ণের আঁচিল
ফরস্কিনের নিচে দুর্গন্ধ যুক্ত তরল
ছোট, খসখসে ঘা
ফুসকুড়ি
প্রোস্টেট ক্যান্সার
মূত্রথলির ঠিক নিচে এবং মলাশয়ের সম্মুখে অবস্থিত একটি ছোট আখরোট বাদামের আকৃতির প্রোস্টেট গ্রন্থিতে প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়ে থাকে। এই ক্ষুদ্র গ্রন্থিটি এক ধরনের তরল নিঃসরণ করে, যা বীর্যের সাথে মিশ্রিত হয়ে শুক্রাণুকে গর্ভধারণের উপযোগী এবং সুস্থ রাখে।
প্রোস্টেট ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ। সৌভাগ্যক্রমে, অধিকাংশ মানুষদেরই প্রোস্টেট ক্যান্সার, তাদের প্রোস্টেট গ্রন্থিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগেই রোগ নির্ণয়ের সময় ধরা পড়ে যায়। ক্যান্সারের এই পর্যায়ে চিকিৎসা করালে প্রায়ই ক্যান্সার কে নির্মূল করা যায়।
প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গগুলো খুবই কম লক্ষ্য করা যায়। এই ক্যান্সার আরও গুরুতর হয়ে ওঠার সাথে সাথে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারেঃ
ঘনঘন প্রস্রাব আসা, কখনো জরুরী ভিত্তিতে, বিশেষ করে রাতের বেলায়
প্রস্রাবের গতি কম থাকা অথবা থেমে থেমে প্রস্রাব হওয়া
প্রস্রাবের সময় ব্যাথা বা জ্বালা পোড়া করা (ডিসইউরিয়া)
মূত্রাশয়ের উপর নিয়ন্ত্রন না থাকা (ইউরিনারি ইনকন্টিন্যান্স)
অন্ত্রের নিয়ন্ত্রন না থাকা (ফিকাল ইনকন্টিন্যান্স)
বীর্যপাতের সময় ব্যাথা হওয়া এবং লিঙ্গ শৈথিল্যতা (ইরেকটাইল ডিসফাংশন)
রক্ত মিশ্রিত বীর্য (হেমাটোস্পার্মিয়া) অথবা প্রস্রাব নির্গত হওয়া
কোমর, নিতম্ব অথবা বুকে ব্যাথা অনুভব করা
বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৫০ বছরের বেশি বয়সের ব্যাক্তিদের মাঝে এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। প্রোস্টেট ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীর বয়স ৬৫ বছরের উপরে। যদি পরিবারের কোন কাছের সদস্যের মাঝে এই রোগ থাকে, তাহলে ব্যাক্তির এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দুই থকে তিনগুণ বেড়ে যায়।
বিভিন্ন প্রাথমিক পরীক্ষা আছে যেগুলো প্রোস্টেট ক্যান্সারের উপসর্গগুলো ধরতে পারে এবং পরবর্তী প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
অকাল বা দ্রুত বীর্যপাত
সহবাস এর সময় যখন একজন ব্যাক্তির তার মন মতো সময়ের অথবা তার সঙ্গীর অর্গ্যাজম হওয়ার পূর্বেই বীর্যপাত হয়ে যায় তখন তাকে অকাল বীর্যপাত বলা হয়। এটি একটি অতি সাধারণ সমস্যা, যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পুরুষদের মাঝে দেখতে পাওয়া যায়। এই সমস্যার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেমন শারীরিক সমস্যা, রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা এবং আবেগতাড়িত/মনস্তাত্ত্বিক কারণ। বীর্যপাত এর সময় দীর্ঘায়িত করার কৌশল, কাউন্সেলিং এবং বিভিন্ন ঔষধ এই সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
অকাল বীর্যপাতের শারীরিক, রাসায়নিক এবং আবেগতাড়িত/মনস্তাত্ত্বিক কারণ সমূহ।
শারীরিক এবং রাসায়নিক কারণ সমূহঃ
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এর সমস্যা থাকা।
অক্সিটসিন এর পরিমাণ সম্পর্কিত হরমোনজনিত সমস্যা, যা পুরুষদের যৌন কার্যকলাপে ভূমিকা রাখে।
সেরোটোনিন অথবা ডোপামিন এর নিম্নমাত্রা, এই রাসায়নিক বস্তুগুলো মস্তিস্কে থাকে এবং এগুলো যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং উত্তেজনার সাথে সম্পর্কিত।
উত্তেজনার সময় পুরুষাঙ্গ অতি সংবেদনশীল হওয়া।
আবেগজনিত অথবা মনস্তাত্ত্বিক কারণ সমূহঃ
সহবাসের সময় নিজের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ। এই সমস্যা নতুন সঙ্গীর সাথে প্রথম মিলনের ভীতির কারণে হতে পারে, অনেক দিন বিরতির পর সহবাসের সময় অস্থির লাগা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অপরাধবোধ, অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে যাওয়া বা অন্য কোন কারণ।
মানসিক চাপ।
দাম্পত্য জীবনে সমস্যা।
বিষাদগ্রস্ততা।
পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব
যখন কোন ব্যাক্তির প্রজনন তন্ত্র একজন নারীকে অন্তঃসত্ত্বা করতে অক্ষম হয় তখন তাকে বন্ধ্যাত্ব বলে। যদি কোন নারী এবং পুরুষ এক বছরের বেশি সময় ধরে অনবরত জন্মনিরোধক পদ্ধতি বিহীন সহবাস করার পরেও নারী সঙ্গীটি সন্তান-সম্ভবা না হন তাহলে, হয় পুরুষ বা নারীর অথবা দুজনেরই বন্ধ্যাত্বের সমস্যা রয়েছে।
কিছু পুরুষ অন্যদের তুলনায় বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকিতে বেশি থাকে, তাঁদের লক্ষণ গুলো হচ্ছেঃ
অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী অথবা স্থূলতা।
বয়স ৪০ বা তার অধিক।
অনিরপদভাবে বিকিরণ বা রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসা।
অনিরপদভাবে পরিবেশগত বিষাক্ত বস্তুর সংস্পর্শে আসা যেমন লেড, ক্যালশিয়াম, কীটনাশক বা মার্কারি
তামাক বা গাঁজা সেবন করা অথবা মদ্যপান করা।
বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন করা যেমন সাইপ্রোটেরন, ফ্লুটামাইড, স্পাইরোনোল্যাকটোন, বাইক্যালুটামাইড, সিমেটিডিন বা কিটোকোনাযল।
অতিরিক্ত গরম পরিবেশে থাকা যা অণ্ডকোষের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বাড়িয়ে দেয়। যারা ঘন ঘন ছউনা (বাষ্প স্নান), গরম পানির বাথ টাবে গোসল নেন বা হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন তাঁদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যাদের এক সময় নিমজ্জিত বা বের না হওয়া অন্ডকোষ (মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর উদর থেকে অন্ডকোষ, অণ্ডথলির যথাস্থানে নেমে না আসা) এর সমস্যা ছিল।
যাদের এক সময় ভেরিকোসিল এর সমস্যা ছিল, এই সমস্যায় অন্ডথলির ভেতর রক্তনালীর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখতে পাওয়া যায়।
টেস্টোস্টেরন এর ব্যবহার, কিছু পুরুষের টেস্টোস্টেরন মাত্রা স্বাভাবিক এর থেকে কম থাকায় ইকজেকশন, ইমপ্ল্যান্ট অথবা টপিকাল জেল ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়।